মোটা হওয়ার প্রাথমিক ধারণা
মোটা হওয়া বা ওজন বৃদ্ধি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন কারণে অনেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ওজন কমানো যেমন একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি মোটা হওয়ার প্রক্রিয়াটিও সহজ নয়। এটি সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। মোটা হওয়া একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, অন্যদিকে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।
রোগা থেকে মোটা হওয়ার উপায়?
ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়ার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা। কম ওজনের কারণে অনেক সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যাদের শরীরের ওজন তাদের উচ্চতার তুলনায় কম। এই ক্ষেত্রে, মোটা হওয়া শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণে সহায়ক হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যেমন প্রোটিন, ফ্যাট, এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
তবে মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং উচ্চ রক্তচাপ। সুতরাং, মোটা হওয়ার প্রক্রিয়ায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
মোটা হওয়ার প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এটি একটি ধীরে ধীরে এবং নিয়মিত প্রক্রিয়া, যা সঠিকভাবে অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সুতরাং, ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে সচেতন হয়ে এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে মোটা হওয়া সম্ভব।
মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা
মোটা হওয়ার প্রক্রিয়ায় খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিভাবে মোটা হওয়া যায় জানতে হলে, সঠিক খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা অপরিহার্য। খাদ্যে উচ্চপ্রোটিন, উচ্চকার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চফ্যাটযুক্ত উপাদান থাকার প্রয়োজন। এই সকল উপাদান শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগায় যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
প্রথমেই আসা যাক উচ্চপ্রোটিনযুক্ত খাবারগুলির দিকে। প্রোটিন শরীরের পেশী গঠনে সহায়ক। মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ডিম, এবং দুধ প্রোটিনের চমৎকার উৎস। এছাড়াও, বাদাম, মটর, এবং সয়াবিন প্রোটিনের ভালো উৎস হিসেবে গণ্য হয়। এই সমস্ত খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
আরো পড়ুন: কিভাবে চিকন হওয়া যায়?
সাত দিনে মোটা হওয়ার উপায়?
উচ্চকার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারগুলি শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। ভাত, রুটি, পাস্তা, আলু এবং বিভিন্ন শস্যদানা কার্বোহাইড্রেটের প্রধান উৎস। খাওয়ার তালিকায় এই খাবারগুলি যোগ করলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও, ফলমূল যেমন কলা, আম, এবং আঙুর কার্বোহাইড্রেটের চমৎকার উৎস।
কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে?
উচ্চফ্যাটযুক্ত খাবারগুলি ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়ক। বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, অ্যালমন্ড বাটার এবং পিনাট বাটার এই সমস্ত খাবারে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। এছাড়াও, তেল যেমন অলিভ অয়েল, নারকেল তেল এবং মাছের তেল উচ্চফ্যাটযুক্ত খাবার হিসেবে গণ্য হয়।
এই সকল খাদ্য তালিকার মাধ্যমে কিভাবে মোটা হওয়া যায় তা জানা সম্ভব। সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে এই খাবারগুলি গ্রহণ করলে ওজন বাড়ানো সহজ হবে। খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি পরিমিত বিশ্রাম এবং ব্যায়ামও ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। মোটা হবো কিভাবে জানতে হলে খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্যতা আনতে হবে এবং প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে এই সকল উপাদানের সঠিক সমন্বয় রাখতে হবে।
প্রোটিন পাউডার এবং অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট
ওজন বাড়ানোর উপায় হিসেবে প্রোটিন পাউডার এবং অন্যান্য সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। প্রোটিন পাউডার কিভাবে মোটা হওয়া যায় তার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে, কারণ এটি শরীরের পেশী বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রোটিন পাউডার সাধারণত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের পর খাওয়া হয়, যা পেশী পুনর্গঠনে সহায়ক। তবে, এটি শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত, প্রধান খাদ্য না।
প্রোটিন পাউডার খাওয়ার সুবিধা অনেক। এটি শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং পেশীর বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। প্রোটিন পাউডার খাওয়া কিভাবে মোটা হওয়া যায় তার একটি প্রধান উপায় হতে পারে।
তবে, প্রোটিন পাউডারের পাশাপাশি অন্যান্য সাপ্লিমেন্টও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন, ক্রিয়েটিন, ব্রাঞ্চড-চেইন অ্যামিনো অ্যাসিড (BCAA), এবং ওজন বাড়ানোর সাপ্লিমেন্টও কিভাবে মোটা হওয়া যায় তার জন্য সহায়ক হতে পারে। এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
যদিও প্রোটিন পাউডার এবং অন্যান্য সাপ্লিমেন্টের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনি এবং লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, বাজারে অনেক নিম্নমানের সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তাই, সঠিক পরামর্শ নিয়ে এবং নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রোটিন পাউডার এবং সাপ্লিমেন্ট কেনা গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব, প্রোটিন পাউডার এবং সাপ্লিমেন্ট কিভাবে মোটা হওয়া যায় তার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে, তবে সঠিক তথ্য ও পরামর্শ নিয়ে সেগুলোর ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
বেক্সট্রাম গোল্ড এবং অন্যান্য ওজন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট
বেক্সট্রাম গোল্ড এবং অন্যান্য ওজন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্টগুলো মোটা হওয়ার জন্য একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। এই সাপ্লিমেন্টগুলো সাধারণত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের একটি ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণ সরবরাহ করে, যা শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে, সঠিক ডোজ এবং ব্যবহার বিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেক্সট্রাম গোল্ড একটি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট যা প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এটি শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে, যা ওজন বাড়ানোর একটি প্রধান উপাদান। প্রতিদিনের খাবারের সাথে এটি গ্রহণ করতে পারেন, তবে ডোজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত, প্রতিদিন ২-৩ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কিলোগ্রাম শরীরের ওজন অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
কিভাবে মোটা হওয়া যায় বা ১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায়?
অন্যান্য ওজন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্টেও বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টি উপাদান থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্টগুলো শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে, এসব সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এছাড়াও, গেইনার সাপ্লিমেন্টগুলোও ওজন বাড়ানোর জন্য কার্যকর। এগুলো সাধারণত উচ্চ ক্যালোরি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ হয়। প্রতিদিনের খাবারের সাথে বা ব্যায়ামের পরে এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, কোন সাপ্লিমেন্টই সরাসরি মোটা হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না, তাই সঠিক ডোজ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সাপ্লিমেন্টগুলো ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের পাশাপাশি এই সাপ্লিমেন্টগুলো গ্রহণ করলে মোটা হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত ব্যবহার বা অনিয়মিত ডোজ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মোটা হওয়ার সহজ উপায় এবং দ্রুত ওজন বাড়ানোর টিপস
মোটা হওয়া এবং ওজন বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। প্রথমত, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাবারে উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার যেমন বাদাম, বাটার, চিজ, এবং শুকনো ফল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এছাড়া, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, এবং লাল মাংস খাওয়া ওজন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। দৈনিক তিনবেলা খাওয়ার পাশাপাশি কিছু হালকা খাবারও (স্ন্যাকস) অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এভাবে প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর কিছু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়ে থাকে এবং ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
দ্রুত ওজন বাড়ে কি খেলে?
তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময় শরীরের বিভিন্ন কোষ পুনর্গঠন হয় এবং এটি ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
চতুর্থত, মানসিক চাপ কমানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ওজন কমানোর কারণ হতে পারে। তাই, নিয়মিত মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
সবশেষে, শারীরিক ব্যায়ামও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন ওজন উত্তোলন, যোগব্যায়াম, এবং হাঁটা শরীরের পেশী গঠন এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য উপকারী হতে পারে।
এই কৌশলগুলি অনুসরণ করে একটি সুস্থ এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা গড়ে তোলা সম্ভব, যা দ্রুত ওজন বাড়াতে এবং মোটা হতে সাহায্য করবে।
মেয়েদের এবং ছেলেদের জন্য বিশেষ ব্যায়াম
মোটা হওয়ার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি সঠিক ব্যায়ামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম শরীরের পেশী গঠন করতে, ক্ষুধা বাড়াতে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। মেয়েদের এবং ছেলেদের জন্য কিছু বিশেষ ব্যায়াম রয়েছে যা মোটা হতে সহায়ক হতে পারে।
মেয়েদের মোটা হওয়ার ব্যায়াম?
মেয়েদের জন্য, স্কোয়াট, লাঙেস, এবং গ্লুট ব্রিজিং ব্যায়ামগুলি অত্যন্ত কার্যকরী। স্কোয়াট পেশী বাড়াতে এবং নিচের শরীরের শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। লাঙেস পেশী গঠনের পাশাপাশি ভারসাম্য উন্নত করে। গ্লুট ব্রিজিং পিঠ এবং কাঁধের পেশী মজবুত করতে সহায়ক। প্রতিটি ব্যায়ামের জন্য ৩ সেট, প্রত্যেক সেটে ১০-১৫ বার করে করতে হবে।
আরো পড়ুন: টেক নিউজ
ছেলেদের মোটা হওয়ার ব্যায়াম?
ছেলেদের জন্য, বেনচ প্রেস, ডেডলিফট, এবং পুল আপ খুবই উপকারী। বেনচ প্রেস বুক এবং বাহুর পেশী গঠনে সাহায্য করে। ডেডলিফট পুরো শরীরের পেশী শক্তিশালী করে এবং পুল আপ ব্যায়ামটি উপরের শরীরের পেশী তৈরি করতে সহায়ক। প্রতিটি ব্যায়ামের জন্য ৩-৫ সেট, প্রত্যেক সেটে ৮-১২ বার করে করা উচিত।
উভয়ের জন্যই ব্যায়ামের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। ভুল পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে পেশী বা জয়েন্টে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। ব্যায়াম করার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত ওয়ার্ম আপ এবং কুল ডাউন করতে হবে। এছাড়াও, ব্যায়ামের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সঠিক বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
মোট ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট করা উচিত। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ দিন ব্যায়াম করতে হবে। এই ব্যায়ামগুলি কিভাবে মোটা হওয়া যায় এই প্রশ্নের একটি কার্যকরী উত্তর দিতে পারে, এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
মোটা না হওয়ার কারণ এবং সেগুলির সমাধান
অনেক ক্ষেত্রে, মানুষ বিভিন্ন কারণে মোটা হতে পারে না। শারীরিক ও মানসিক কারণগুলি এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। শারীরিক কারণগুলির মধ্যে হাইপারথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস, এবং পুষ্টির অভাব উল্লেখযোগ্য। হাইপারথাইরয়েডিজম একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন করে, যার ফলে মেটাবোলিজম বেড়ে যায় এবং ওজন কমে যায়। ডায়াবেটিসের কারণে শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, যা ওজন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানের অভাবে শরীর সঠিকভাবে ওজন বাড়াতে পারে না।
মানসিক কারণগুলির মধ্যে উদ্বেগ, ডিপ্রেশন এবং খাওয়ার ব্যাধি অন্যতম। উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের ফলে মানুষের ক্ষুধা কমে যেতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। খাওয়ার ব্যাধি যেমন অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়া শরীরের স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য প্রথমে শারীরিক কারণগুলি নির্ণয় করতে হবে। যদি হাইপারথাইরয়েডিজম বা ডায়াবেটিসের মতো কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত। পুষ্টির অভাব থাকলে, পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খেলে মানুষ মোটা হতে পারে।
মানসিক কারণগুলি কাটিয়ে উঠার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের জন্য থেরাপি এবং ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে। খাওয়ার ব্যাধির ক্ষেত্রে, সাইকোলজিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া উচিত। নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করে ওজন বাড়ানোর উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্ট এবং বাড়িতে বসে ওজন বাড়ানোর উপায়
ওজন বৃদ্ধি একটি প্রক্রিয়া যা সময় এবং ধৈর্য দাবি করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে সহজ করা যায়। ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে এবং বাড়িতে বসে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করে আপনি লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।
সকালে খালি পেটে কি খেলে মোটা হওয়া যায় এবং রাতে কি খেলে ওজন বাড়ে?
প্রথমত, একটি কার্যকর ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে। এই ডায়েটে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের সঠিক মিশ্রণ থাকা অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, সকালের নাস্তায় ডিম, পাউরুটি, এবং দুধ রাখা যেতে পারে। দুপুরের খাবারে চাল, ডাল, মাংস বা মাছ এবং সবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিকেলের নাস্তায় বাদাম, ফল এবং দই খাওয়া যেতে পারে। রাতের খাবারে ভাত, সবজি, এবং মুরগি বা মাছ রাখা যেতে পারে।
ওজন বাড়ানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে বসে ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। বিশেষ করে, ওজন প্রশিক্ষণ বা রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং ওজন বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এই ধরনের ব্যায়াম পেশী গঠনে সহায়ক হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করা যেতে পারে।
সার্বিকভাবে, কিভাবে মোটা হওয়া যায় তার জন্য খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের সঠিক মিশ্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম এই প্রক্রিয়ার মূল উপাদান। ওজন বৃদ্ধির জন্য ধারাবাহিকতা এবং ধৈর্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।